সাধারণের জীবন রক্ষার এ কৌশল প্রয়োগ বন্ধ করা হলে গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর মিছিল আরও লম্বা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হামাসের ভয়াবহ হামলার পর অবরুদ্ধ গাজা এলাকায় পাল্টা আক্রমণে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) পুরনো এ কৌশল অনুসরণ করছে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সিএনএনের একটি প্রতিবেদনে তেমন ধারণার কথা বলা হয়েছে।

যুদ্ধকালীন সময়ে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি কমাতে ব্যবহৃত কৌশলটি বাতিলের বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিচার্ডের কথায় তেমন ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে।  

সামরিক এ কৌশলটি ২০০৯ সালে প্রথম প্রয়োগ করা হয়। পরে বিভিন্ন সংঘর্ষের সময় তা অনুসরণ করা হয়েছে।

‘নক অন দ্য রুফ’ কী, কীভাবে কাজ করে? 

মূলত জঙ্গি কিংবা তাদের অস্ত্রের মজুদ ধ্বংসের জন্য ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য যখন কোনো ভবনে অভিযান চালাতে যায়, তখন সেখানকার বাসিন্দাদের সতর্ক করতে ও নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে প্রথমে অবিস্ফোরক কিছু বস্তু ওই ভবনের ছাদে ছুঁড়ে দেয়।  বেসামরিক লোকজনে সরে যাওয়ার পর চালানো হয় বড় আকারের অভিযান।

বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি কমাতেই এই কৌশল প্রয়োগ করে ইসরাইলি বাহিনী। 

মানুষের প্রাণরক্ষা করাই এই কৌশলের উদ্দেশ্য হলেও এটি নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর ভাষ্য, অবিস্ফোরক বস্তু কোনো ভবনে ফেলা সতর্ক করার কোনো ব্যবস্থা হতে পারে না।  

কেউ কেউ বলেন, বেসামরিক মানুষকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ দিলেও অবরুদ্ধ একটি ভূখণ্ডে আসলে তেমন নিরাপদ স্থান কমই আছে।

১৪০ বর্গমাইলের গাজা অনেকটা তেমনই একটি ভূখণ্ড। এটি বিশ্বের অন্যতম ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাও। এখানে বোমা হামলায় নারী, শিশুসহ বেসমারিক মানুষের মৃত্যু খুবই সাধারণ ঘটনা।

বেসামরিক মানুষ ও সামরিক বাহিনীকে আলাদা করাটা কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন  আইডিএফ মুখপাত্র হেক্ট। 

“সাধারণ মানুষ যে ভবনে বসবাস করে, সেখানে অস্ত্রের মজুদ থাকতে পারে, সেখানে হামাসের কোনো নেতা লুকিয়ে থাকতে পারে।”

গত শনিবার ইসরায়েলের হামাসের হামলার পর ধারণা করা হচ্ছে ইহুদী রাষ্ট্রটি গাজায় প্রতিশোধমূলক হামলায় ‘নক অন দ্য রুফ’ কৌশল প্রয়োগ করছে না।

ইসরাইলি হামলায় প্রায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া গাজার কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, তাদের বাড়িঘরে বোমা ফেলার আগে তার কোনো সতর্কবার্তা পাননি।

তাহলে ‘নক অন দ্য রুফ’ কৌশল কি প্রয়োগ করা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নে সেনা কর্মকর্তা হেক্ট বলেন, “তারা (হামাস) যখন এসে আমাদের অ্যাম্বুলেন্সগুলোতে গ্রেনেড ছুড়েছিল তখন নক অন দ্য রুফ প্রয়োগ করেনি। এটা যুদ্ধ, এর ধরণ ভিন্ন।”

যদি সেটিই হয়, অর্থাৎ ‘নক অন দ্য রুফ’ প্রয়োগ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে গাজায় বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর মিছিল আরো লম্বা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত শনিবার থেকে এ পর্যন্ত অবরুদ্ধ ওই এলাকায় ইসরাইলি হামলায় ৯০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also

উত্তেজনার মধ্যে আবার মধ্যপ্রাচ্য সফরে যাচ্ছেন ব্লিঙ্কেন

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আজ বৃহস্পতিবার নতুন করে মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু …